ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবি, রায়পুরার ৬ জন নিখোঁজ   

নিজস্ব প্রতিনিধি নরসিংদী :লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌ-দুর্ঘটনার শিকার ২৩ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তাদের অবয়ব দেখে বাংলাদেশি বলে ধারণা রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের। তবে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না আসলেও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার  ছয়জন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করেন, পরিবারের সদস্যরা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় ২৩ জনের মরদেহ দাফনের বিয়ষটি জানান লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাসার।
আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাসার বলেন, ২৫ জানুয়ারি রাতে লিবিয়া উপকূল থেকে একটি নৌকা ৫৬ জন যাত্রী নিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা দেয়। খুব সম্ভবত এদিন রাতেই নৌকাটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে ২৮, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি উপকূলে মরদেহ ভেসে আসতে থাকে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ২৮ জানুয়ারি সাতজন, ২৯ জানুয়ারি ১১ জন, ৩০ জানুয়ারি তিনজন ও ৩১ জানুয়ারি দুজন—মোট ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো আজদাদিয়া এলাকায় সমাহিত করা হয়েছে।
এবার লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় ট্রলারডুবিতে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ছয় যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। এ যেন গভীর সমুদ্রে ডুবল তাদের স্বপ্ন।
নিখোঁজরা হলেন- উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের সাপমারা এলাকার সাদেক মিয়ার ছেলে জুয়েল, জয়নগর এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে আশিক মিয়া, বেগমাবাদ ঝাউকান্দি এলাকার আব্দুল ছালামের ছেলে সায়েম, মুছাপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকার কালু মিয়ার ছেলে মোস্তাক, আরশ মিয়ার ছেলে রাকিব ও তুলাতলী এলাকার লিটন মিয়ার ছেলে ইমরান।
২৫ জানুয়ারি ওই ছয় যুবকসহ ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায় একটি ট্রলার। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। তারা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন; জানেন না পরিবারের সদস্যরা।
নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা বলেন, প্রবাসী তোফাজ্জল ও কবিরের মাধ্যমে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে ২৫ জানুয়ারি পাড়ি দেন ওই ছয়জন। কিন্তু ঘটনার আটদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারের।
অভিযুক্ত তোফাজ্জলের বাড়িতে গেলেও পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে লিবিয়ার ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। অপরদিকে কবির মিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগী জুয়েলের বাবা সাদেক মিয়া বলেন, গার্মেন্টসকর্মী ছিলেন জুয়েল। লিবিয়া প্রবাসী বড় ভাই কালামের মাধ্যমে ওই দেশে যান তিনি। সেখানে তোফাজ্জলের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যাওয়ার চুক্তি হয়। ২৪ জানুয়ারি জুয়েলের সঙ্গে শেষ যোগাযোগ হয়েছিল তার পরিবারের। এরপর থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। একই অবস্থা আশিক, মুস্তাক, রাকিব ও ইমরানের। ইতালি যাওয়ার পথে তারাও ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানায় তাদের পরিবার।
নিখোঁজ ছয়জনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানের সন্ধান পেতে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসসহ প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, লিবিয়ায় ট্রলারডুবিতে ২০ বাংলাদেশি নিহতের খবর শুনেছি। সেখানে ওই ছয়জন আছে কিনা নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে আমরা খোঁজ নেবো। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সর্বশেষ