হত্যা মামলার আসামী হয়েও বহাল তবিয়তে দূর্নীতিবাজ চুন্নু

এস এম রাসেল আহমেদ

ছাত্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, অপশাসন , হত্যা ও নির্যাতনে জড়িত সহযোগীদের সাজার দাবিতে এখনো সোচ্চার রয়েছে ছাত্র-জনতা। সেই সময় আলোচিত ও সমালোচিত বিভিন্ন হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িতদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে হত্যা মামলাও দায়ের হয়েছে। হত্যাকান্ডে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ ১৫ জন বিতর্কিত কর্মকর্তাকে আসামি করে গেল ৩১ অক্টোবর ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন কে.এম শাহরিয়ার শুভ নামের এক ব্যক্তি ।

মামলার নথি পত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতারসহ ৪ জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, ৪ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ৬ জন নির্বাহী প্রকৌশলী ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ১ জন নির্বাহী প্রকৌশলীর নাম আছে। এদের মধ্যে নির্বাহী প্রকোশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর পরামর্শেই প্রকৌশলীরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীদের দেশের ক্রান্তিকালে বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগান দিয়েছিলেন জুলাইয়ের নির্মম ছাত্র-জনতা হত্যাযজ্ঞে।

হত্যা মামলাটি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার জন্য প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের মাধ্যমে নির্বাহী প্রকোশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর হত্যা মামলার বাদীর সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করছেন।

গণপূর্তের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে অনিয়ম ছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হেলমেট পরা অবস্থায় পিস্তল হাতে গুলি চালানো গণপূর্ত বিভাগ ৪ এর ঠিকাদার সমিতির সেক্রেটারি হাসান মোল্লাকে অর্থ জোগান দেন তৎকালীন ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু। ঢাকা কলেজের সাবেক এই ছাত্রকে অন্যতম ঠিকাদার হিসেবে সব সময় সহযোগিতা করেন গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।

সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে পতিত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা অপব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ আছে। দুর্নীতি অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাও রয়েছে।

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদফতরের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকোশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ঠ কোম্পানির সঙ্গে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি টেন্ডার ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওপেন প্লাটফর্মে টেন্ডার উন্মুক্ত করিয়ে তাদের মাধ্যমে টেন্ডারের দরপত্রের আহ্বান করে আবেদন গ্রহন করেন এই কর্মকর্তা। তাদেরকে টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি কাজ পাইয়ে দিয়ে এর বিনিময়ে নিয়ে থাকেন মোটা অংকের টাকা।

এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে এই নির্বাহী প্রকোশলী চুন্নুর বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মিরপুর পাইকপাড়া এালাকায় পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টারের পাশের অবস্থিত (রুম নম্বর ৭ ও ৮) এই দুটি রুমকে সংস্কার/ মেরামত ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আইভি বাংলোতে রুপান্তরের কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্ধকৃত অর্থে কাজ শেষ না করে কমিশন নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দকৃত অর্থ পাইয়ে দেন তিনি।

এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে কাজ সম্পাদন করা হয়েছে সেই একই কাজ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সম্পাদন করার নামে ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মিরপুরের পাইকপাড়ায় পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টার (পুরাতন) এর ২য় তলায় ৪টি কক্ষ, ৩য় তলায় পশ্চিম পাশের ৪টি কক্ষ, ২টি বাথরুম ও বারান্দায় টাইলস লাগানোর কাজ বাস্তবায়িত হলেও সেই একই কাজ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঐ একই ভবনে সম্পাদিত ৪টি দরজার পাল্লা, চৌকাঠ, এলুমিনিয়াম ও গ্লাসের কাজ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেখানো হয়। মাত্র ১০ টি কক্ষে কাজ করার জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে যা অত্যাদিক বেশী ও বাস্তবতা বিবর্জিত। এই খাতে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে গনপূর্ত অধিদপ্তর জুড়ে।

একই সঙ্গে নানান ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, কমিশনের বিনিময়ে কাজ ভাগিয়ে নেয়া, কাজ না করে বিল উত্তোলন করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকোশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে।

এদিকে জানা গেছে, এসব দূর্নীতির ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় নিজ এলাকায় সাম্রার্য গড়ে তুলেছেন নির্বাহী প্রকোশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু।

সূত্র বলছে, চুন্নু নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে গড়ে তুলেছেন নাহিয়ান ব্রিকস ফিল্ড, পটুয়াখালী কলেজ রোডে দুইতলা বাড়ি, পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে পাঁচ একর জমি, পটুয়াখালীতে নেক্সাস নামে একটি গার্মেন্টের শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকার ধানমণ্ডিতে সেন্ট্রাল রোডে ও বেইলী রোডে দু’টি ফ্ল্যাট এছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে অসংখ্য সম্পদ।

উল্লেখ্য গত ২৮ এপ্রিল পটুয়াখালীর কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী তার বাবা আব্দুল ছালাম মৃধার নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেন এবং সরকারি গাড়ি ব্যবহার ও নগদ টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগও ছিল। টাকা দিয়ে ভোট কিনে বাবাকে পাশ করানোর অভিযোগ করেন পরাজিত প্রার্থী মনির মৃধা।
এ বিষয়ে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ ও দেন তিনি।

হত্যা মামলা ও অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের চলতি দায়িত্ব এ থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_img

সর্বশেষ